পথে-ঘাটে এমন অনেক মানুষের দেখা মেলে, যাঁদের শরীরে ত্বকের নিচে ফোলা ফোলা গুটি। আবার কারও দেখা না গেলেও ত্বকের নিচে হাত দিয়ে অনুভব করলে সারা শরীরে গুটি গুটি অনুভব করা যায়। এগুলো হলো নিউরোফাইব্রোমা বা স্নায়ুর আবরণীর টিউমার। এটি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ টিউমার নয়, ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও কম। অনেক সময় নিউরোফাইব্রোমা শরীরজুড়ে হয় এবং এর সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও রোগ হয়, তখন তাকে নিউরোফাইব্রোমেটোসিস বলে।
কেন হয়?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের কারণ বংশগত। মা-বাবা কারও এই রোগ থাকলে সন্তানের মাঝে তা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লক্ষণ
সারা শরীরে যেকোনো স্নায়ুতে ছোট অথবা বড় টিউমার বা গুটির মতো হয়। চামড়ার মধ্যে ফ্যাকাশে দাগ থাকতে পারে। চোখে দেখতে সমস্যা, মেরুদণ্ডের হাড়ক্ষয় অথবা বাঁকা, মস্তিষ্কের বিভিন্ন টিউমার এই রোগের কারণ হিসেবে থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
নিউরোফাইব্রোমা যদিও দেখেই চেনা যায়, তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বায়োপসি করতে হতে পারে। এর সঙ্গে চোখ পরীক্ষা করতে হবে চক্ষুবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে। প্রায়ই এই রোগীদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন রকম টিউমার থাকে বলে মস্তিষ্কের এমআরআই করা দরকার পড়ে।
চিকিৎসা
নিউরোফাইব্রোমেটোসিস রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে এই রোগের সঙ্গে চোখ, হাড় অথবা মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক আছে। নিউরোফাইব্রোমেটোসিস থাকলে শরীরে অন্য কোথাও কোনো রোগ আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে এবং থাকলে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করতে হবে। নিউরোফাইব্রোমা সাধারণত অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না। যদি ব্যথা করে অথবা দেখতে খারাপ দেখায়, তাহলে নিউরোফাইব্রোমা অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।
বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসায় জেনেটিক কাউন্সেলিংকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই রোগ গর্ভাবস্থায় নির্ণয়, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারে অন্য সদস্যদের এই রোগ নির্ণয় অথবা এই ধরনের রোগীদের বিয়ের ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করা হয়।
ডা. নাজমুল হক
সহকারী অধ্যাপক (স্নায়ুরোগ),
মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।